প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর টাইমলাইন থেকে :
গত ৩ জুন, শুক্রবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়িতে একটি বাগান দেখতে গিয়েছিলাম। যাবো যাবো বলে এরআগে আর যাওয়াই হয়নি। ওইদিন অনেকটা পরিকল্পিতভাবে সোনাইছড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন হওয়ায় গন্তব্যে পৌছঁতে বেশিক্ষণ লাগেনি। সোনাইছড়ি ৭ নং ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়া এলাকায় অন্তত আট বছর আগে বাগানটি গড়ে তোলেন পুলক বড়ুয়া নামে এক কঠোর পরিশ্রমী আর প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। পুলক বড়ুয়া এক সময় রক্তদান কর্মসূচী নিয়ে পড়ে থাকতেন। এলাকায় কারো রক্তের প্রয়োজন হলে সরাসরি পুলক বড়ুয়াই ছিলো নির্ভরযোগ্য ভরসার ঠিকানা। পরে জীবন-জীবিকার তাগিদে বাগান করার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন। এই কাজে জড়িয়ে পড়ার পর প্রকৃতির সাথে তার ঘনিষ্ট সখ্যতা গড়ে উঠে। এখন শুধু জীবিকার স্বার্থে তিনি বাগান করেন না। তার প্রমাণ মিলিয়ে নিতে হলে আপনাকে একবার তার বাগান থেকে ঘুরে আসতে হবে। শুনতে হবে তার মনের গভীরে লালন করা কথাগুলো।
প্রায় ৪ একর জায়গা জুড়ে বিশাল এই ফলজ বাগান তিলে তিলে গড়ে তোলা হয়। তার লাগাতার আট বছরের পরিশ্রম বৃথায় যায়নি। শুরুর দিকে পরিকল্পনায় মূলত আম বাগান প্রাধান্য পেলেও এখন বাগানে দেশি-বিদেশি প্রায় ২৪ জাতের আম গাছের পাশাপাশি ড্রাগন, লিচু, পেয়ারা, পেপেঁ, লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ শোভা পাচ্ছে। ড্রাগন চাষের অমিত সম্ভাবনা আছে কিন্তু।
কৃষি বনায়ন আর পরিবেশ রক্ষা দুটোয় হচ্ছে এই বাগানের মাধ্যমে। পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে বনায়ন করার পাশাপাশি সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিশাল এই বাগান। বাগানে ঘুরে ঘুরে দেখার সুবাদে বাগানের উদ্যোক্তা পুলক বড়ুয়ার সাথে অনেক কথা হয়। এসময় পুলক বড়ুয়া আক্ষেপ করে বলেন, অনেক ঋণ করে এই বাগান একটু একটু করে গড়ে তুলেছি। বাগান থেকে কখন আয় করবো সে আশায় বসে থাকিনি। যেভাবেই পারি বাগানে বিনিয়োগ করেই যাচ্ছি। বাগানে দিনরাত একসমানে পড়ে থেকেছি গত আট বছর ধরে। এখানে জীবনের ঝুঁকিও ছিলো। কিন্তু কোথাও কোন সহযোগিতা মিলেনি। এমনকি স্থানীয় উপজেলার কৃষি কার্যালয় থেকেও কোন সহযোগিতা মিলেনি। অথচ সরকারিভাবেও নানান সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ এবং এখতিয়ার আছে। তারা নিজের গরজে কেউ একবার দেখতেও আসেননি।
তার যে কথাটি মনে প্রচন্ডভাবে দাগ কেটেছে সেটা হলো- অনেকে যারা পরিবেশে প্রতিনিয়ত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে পরিবেশের ক্ষতি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন তারা অনেকের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছেন। আর আমি প্রতিনিয়ত পরিবেশে কোটি টাকার অক্সিজেন মজুদ করে ভাল একটি শার্টও গায়ে দিতে পারিনা।