অনলাইন ডেস্ক :
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নড়াইলে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার তারা লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়া মন্দিরে আয়োজিত একটি সমাবেশে স্থানীয়দের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের উপস্থাপনায় উপস্থিত স্থানীয়দের উদ্দেশে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
এক ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দীঘলিয়ায় ১৫ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আকাশ সাহার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে লোকজন।
সাম্প্রদায়িক চক্র ষড়যন্ত্র করছে, অন্তর্ঘাত হচ্ছে: নড়াইলে ইনু
বিকালে উত্তেজনা আরও বাড়ে এবং সন্ধ্যায় ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে সাহাপাড়ার কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় মন্দিরে ঢিলও ছোঁড়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ১৪ দল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে।
“কে সংখ্যালঘু বা কে সংখ্যাগুরু এসব কোনো হিসাব নাই। হিসাব একটাই আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, আমরা সবাই সমান।”
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠী হামলা করে – এটা আমরা জানি; কিন্তু পরিস্থিতি জটিল করেছে আমাদের ঘরের লোকের পদস্খলন ঘটিয়ে। ঘরের ভিতর কিছু অধঃপতন ঘটেছে। প্রশাসনের ভিতরে কিছু ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক চক্র উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ষড়যন্ত্র করছে এবং অন্তর্ঘাত হচ্ছে।”
এ জন্য প্রতিটা ঘটনায় তারা [প্রশাসনের লোকজন] যথাসময়ে হাজির হচ্ছে না; যথা সময়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
“আসামি ধরলেও এমনভাবে তারা চার্জশিট করছে যেন মামলা থেকে তারা বেরিয়ে যেতে পারে। তাই আমি মনে করে প্রশাসনের পিয়ন থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত, কনস্টেবল থেকে আইজি পর্যন্ত প্রত্যেককে অসাম্প্রদায়িক হতে হবে।”
সাম্প্রদায়িক চক্র ষড়যন্ত্র করছে, অন্তর্ঘাত হচ্ছে: নড়াইলে ইনু
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মহাসাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল বারংবার মিথ্যাচার করছে, ষড়ষন্ত্র করছে, তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় এই সাম্প্রদায়িক দাবানল। এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকলকে পাহারাদার হতে হবে।
“এ ঘটনার শুরু থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই জনপদের সাংসদ মাশরাফী বিন মুর্তজা সব সময় আপনাদের পাশে আছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দোকান- মন্দির সংস্কারের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনা আছেন আপনাদের পাশে। কোনো অপশক্তি আপনাদের জন্মভিটার এই মাটি থেকে উৎখাত করতে পারবে না। আমাদের জীবন থাকতে, আমরা আপনাদের নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দিব না।”
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, গণআজাদী লীগের এস কে সিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ রায়সহ বাসদ (রেজা), তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ।
আরও উপস্থিত ছিলেন নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নিজামউদ্দিন খান নিলু, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ূর রহমান, লোহাগড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী বনি আমিনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত চারটি মন্দিরে ২৫ হাজার করে মোট ১ লাখ টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১০ পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
সূত্র : বিডিনিউজ