আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার যে দাবি বাংলাদেশ বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে জানিয়ে আসছে, তাতে জোরালোভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ফ্রান্স।
বুধবার সন্ধ্যায় প্যারিসের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে সে দেশে সরকারি সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একে আব্দুল মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব জায়গাতেই আলোচনা হয়েছে। বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে। তখন এ ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
“তারা (ফ্রান্স) যেটা বলেছে, শেষ পর্যন্ত যে বাক্যটা হল, “আমরা সিরিয়াসলি আপনাদের সাথে থাকব এবং এইটা যাতে সমাধান হয়, সেজন্য আমরা জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য হিসেবে সেইখানে…’।”
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ইদানিং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাবের ‘পরিবর্তন’ আসার কথা বৈঠকে তুলে ধরার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা বললাম যে ইদানিং একটা পরিবর্তন এসেছে। আসিয়ান বলেছে তোমরা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান কর।
“আমরা (ফ্রান্সকে) বললাম আপনারা এটা নিরাপত্তা পরিষদে নিয়ে আসেন।… তারা বলেছে এইটা তারা দেখভাল করবে।”
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থী এখন ‘বোঝা’ হিসেবে দেখছে সরকার।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের অগাস্টে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলেছে জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বাংলাদেশে সৃষ্ট শরণার্থী সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে, সেজন্য নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলার উদ্যোগ চার বছর আগে নিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তবে চীন ও রাশিয়া ওই উদ্যোগ বর্জন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত মাসে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘ যা যা করার করছে। তবে, জাতিসংঘের শক্তিটা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচজন স্থায়ী সদস্য, তারা হলো ‘মাতব্বর’।
”এরা একজন যদি আপত্তি করে সেখানে জাতিসংঘ কিছুই করতে পারে না। তার ফলে আমাদের রোহিঙ্গা সমস্যা, ফিলিস্তিনের সমস্যা ঝুলেই আছে।”
প্যারিসের সংবাদ সম্মেলনে বুধবার তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে।
“আমরা দ্বিপক্ষীয় চেষ্টা করছি, ত্রিপক্ষীয় চেষ্টা করছি, বহুপক্ষীয় ফোরামে চেষ্টা করেছি।… কোথাও কোনো…।”
বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে তিনি আবারও বলেন, “এই সমস্যাটা মিয়ানমার তৈরি করেছে ও সমাধানও মিয়ানমারের কাছে।”
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমোন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহাসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ