নিজস্ব প্রতিবেদক:
কনসার্টের নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে সম্পন্ন হয়েছে তথাকথিত বীচ কার্নিভাল। ১ জানুয়ারী বিকালে সৈকতের সী-গাল পয়েন্টে বিশৃঙ্খল পরিবেশে এ আয়োজনের সমাপ্তি হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহ খানেক আগে থেকে সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বীচ কার্নিভালের ব্যানার-ফেস্টুন সাটানো হয়। এতে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের ছবি দিয়ে আকৃষ্ট করা হয় সাধারণ মানুষকে।
এসব ব্যানার-ফেস্টুনে গত ৩০ ডিসেম্বর, ৩১ ডিসেম্বর ও আজ ১ জানুয়ারী কনসার্টের ব্যাপক প্রচারণা করতে দেখা যায়। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানমালায় কিরণ চন্দ্র রায় ও সতাদ্বী রায়ের নাম থাকলেও তারা কেউই আসেননি। এরপরদিন গান গাইতে আসেননি লালন ব্যান্ড ও বাপ্পা মজুমদার। সর্বশেষ রবিবার শুধুই বাংলা সিনেমার গায়িকা মিমি ও ওয়ারফেজের শো দিয়ে কার্নিভালের ইতি ঘটে। অথচ ওইদিন ফকির সাহাব উদ্দিন ও নগর বাউল খ্যাত জেমস পারফরম্যান্স করার কথা ছিল।
এদিকে শেষ দিনে জেমস আসার কথা শুনে সাগরপাড়ে ছুটে আসে হাজার হাজার ভক্তরা। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পরও জেমসকে দেখতে না পেয়ে হতাশা নেমে আসে নগর বাউল পাগলদের মাঝে। এক পর্যায়ে প্রসিদ্ধ এই শিল্পীবিহীন প্রোগ্রাম সমাপনীর ঘোষণা আসলে সাধারণ মানুষের মাঝে হতাশার চাপ আরো স্পষ্ট হতে থাকে। এসময় জেমস ভক্তদের মাঝে গুঞ্জন উঠে, বীচ কার্নিভালে কনসার্টের নামে প্রতারণা করা হয়েছে। অনেকেই একে জেমস প্রতারণা বলে অভিহিত করেছেন।
এর আগে দুপুর ২টা থেকে কার্নিভাল প্রাঙ্গনে এসে অনেককেই পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। আয়োজক কার্নিভাল ইভেন্টস নামে একটি আনখোরা প্রতিষ্ঠান নামে-বেনামে অনুষ্ঠানের ভিআইপি কার্ড বিতরণ করেন। এসব কার্ড নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এসে অপমানিত হতে হয়। ঢাকা থেকে আনা দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা কাউকেই অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ দেননি। খোদ ভিআইপি ও প্রেস কার্ড নিয়েও ঢুকতে পারেনি অনেকেই।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আগতরা। অনেক সম্মানি মানুষ পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে লাঞ্চিত হয়ে নিরবে চলে যেতে দেখা গেছে। পর্যটক দম্পতি ইমতিয়াজ বুলবুল ও সেলিনা আহমেদ জানান, কার্নিভাল নামে এটি শুধু প্রতারণা। নাম স্বর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান কোনদিন এমন আয়োজন করতে পারে না। দায়িত্বে নিয়োজিত কতিপয় কতিপয় পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা একতরফা ভাবে শৃঙ্খলতা ধরে রাখতে গিয়ে উল্টো হিতের বিপরীত হয়েছে। তাদের কেউ না মানার কারণে ঘটেছে একাধিক অপ্রীতিকর কান্ড। দস্তাদস্তি হয়েছে আগত দর্শকদের সাথে।
শামীম আহমদ নামে এক পর্যটক জানান, বীচ কার্নিভাল করা হয় পর্যটন শিল্পকে তুলে ধরার জন্য। যার মূল দর্শক হচ্ছে পর্যটকরা। কিন্তু কার্নিভালে গিয়ে অব্যবস্থাপনা দেখে আমরা চলে আসি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভাবা উচিত।
স্থানীয় দম্পতি রাজু ও মিলি জানান, কনসার্টের আওয়াজ শুনে আমরা কার্ড নিয়ে ছুটে আসি। কিন্তু গেইটে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের ধাক্কা খেয়ে আমরা চলে আসি। এক স্বেচ্ছাসেবক মেয়েদেরও ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। সুশৃঙ্খল ভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানালেও তারা তাতে কর্ণপাত করছেনা।
অভিযোগ উঠেছে, কার্নিভাল ইভেন্টস এর নেপথ্যে কারা জড়িত এটাও সবার কাছে সুষ্পষ্ট ছিলনা। একটি চক্র পর্যটন কর্পোরেশনের নাম ব্যবহার করে কার্নিভালের নাম দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ বীচ কার্নিভাল করছে। ওই চক্রের সদস্যদের পকেটে পকেটে কার্নিভালে টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই অনুষ্ঠান ঘিরে চরম অসন্তোষ রয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরও।